শেখ সাহেবের বেটি বলেছে, আজ ইলিশ না খেতে

বাংলা নববর্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর রমনা পার্কে পান্তা ইলিশ খুঁজে দেখার কৌতূহল হলো। কিন্তু এবার কোথাও ইলিশ মাছের নাম নেই, গন্ধতো দূরের কথা। ঘুরতে ঘুরতে তিন নেতার মাজারের পাশের মাঠে গরম ভাতের ধোঁয়া দেখে সেখানে গেলে দেখা যায়, বড় একটি পাত্রে গরম ভাত আর ভর্তা ভাজি নিয়ে বিক্রি করছেন এক নারী, পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সহায়তা করছে একজন কিশোর।

কাছে গিয়ে কথা বলতে গেলে জানালেন, তার নাম রানু বেগম। গত ছয় বছর ধরে এখানে ভাত-সবজি-তরকারি বিক্রি করছেন তিনি। খেটে খাওয়া মানুষেরা তার প্রধান ক্রেতা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ফুটপাথে বসে তার দোকানের খাবার খান। রানু বেগমের দোকানে শুভ্র চেহারার একজন পৌঢ় মানুষ মুরগির তরকারি দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন।

খাওয়া শেষ করে রানু বেগমকে দাম চুকাতে এসে তিনি বলেন, ‘শেখ সাহেবের কথায় মানুষ যুদ্ধ করেছিল আর এখন শেখের বেটির কথার বাইরে মানুষ যাবে কিভাবে? প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের মানুষকে কিছু বলেন সেটা ভালোর জন্যই বলেন, দেশের মঙ্গলের জন্য বলেন,

এটা এই দেশের মানুষ না বুঝলে চলবে কেন?’

এই প্রৌঢ়র কথা শুনে তার নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘কথা শুনেই বুঝতে পারছি আপনি সাংবাদিক মানুষ। পত্রিকায় নাম আসার প্রয়োজন নেই, শুধু লিখবেন শেখ সাহেবের বেটি (মেয়ে) ইলিশ খেতে এখন না করেছে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের কথা চিন্তা করে, এখন যদি আমরা এই লোভটুকু সংবরণ করতে পারি তাহলে বাজারে ইলিশের অভাব হবে না, চড়া দামে বিক্রিও হবে না। সেটা আমাদের সবার জন্যই ভালো, আর ইলিশ পান্তা কখনই আমাদের এই বৈশাখের অংশ ছিল না, কেন এই ভ্রান্ত সংষ্কৃতিকে আমরা প্রশ্রয় দেব বাঙালির প্রাণের উৎসবে?’

কথা হয় দোকানদার রানু বেগমের সাথে। তিনি জানান, আজ পহেলা বৈশাখের দিনে ভোর পাঁচটায় উঠে মিরপুর থেকে রওনা হয়ে এখানে এসেছেন সকাল ছয়টায়। সামনের বড় টেবিলে সাজানো কী কী খাবার রয়েছে জানতে চাইলে ঢাকনা সরিয়ে নিজেই দেখালেন শুটকি ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা, বেগুন ভর্তা, আম চাটনি, সবজি, ডিম ভুনা, আলু করল্লা ভাজি, মুরগির ঝোল, আলু দিয়ে গরুর মাংসের তরকারি। রানু বেগম জানালেন, ভাত আর গরুর মাংস আজ রাখছেন ১০০ টাকা, মুরগি ৬০ টাকা আর দুইটা ভর্তাসহ ডিমের তরকারি বিক্রি করছেন ৪০ টাকায়।

আজকের দিনে গরম ভাত কেন আর ইলিশ মাছ নেই কেন জানতে চাইলে রানু বেগম বলেন, গত বছর পানি দেওয়া ভাত আর এক টুকরো ইলিশভাজা বিক্রি করছেন ১৫০ টাকায়, তার আগের বছর বিক্রি করছেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। তবে গত বছর থেকেই ইলিশ মানুষ খাচ্ছে না, আগ্রহ কম মানুষের। গত বছর তাই অনেক দাম দিয়ে ইলিশ কিনে সেগুলো বিক্রি করেও লাভ করতে পারেননি। একারণে কয়েকদিন আগেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এবারের পহেলা বৈশাখের খাবারের তালিকায় ইলিশ ভাজা রাখবেন না, তারচেয়ে ভর্তা, গরুর মাংস আর গরম ভাতই মানুষ বেশি খাবে। আজ বাস্তব পরিস্থিতিও তার পক্ষে, জানালেন রানু।

আরও কথা হয় রানু বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে বলেছে, এই সময়টাতে ইলিশ মাছ ধরা আইনে নিষেধ আছে, লেখাপড়া জানা মেয়ে প্রথম থেকেই এবারে ইলিশ বিক্রির বিপক্ষে ছিল, আর গতবারের লোকসানের কথা চিন্তা করে আমিও আর মেয়ের কথার বাইরে যাইনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর